তৃণমূলে শেষের মুখে অনুব্রত জামানা!
সারা বাংলা ডেস্ক: ‘ পুলিশকে বোমা মারুন’ থেকে ‘ পুলিশের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী’। তৃণমূলের জেলা সভাপতি থেকে পুলিশের মুখে ‘স্থানীয় নেতা’! ঘটনাচক্র সাজালে এভাবেই একদা বীরভূম জেলার তৃণমূলের শেষকথা অনুব্রত মন্ডলের জীবনপঞ্জিকা। এক সময় বীরভূমের প্রশাসন থেকে দল সবেরই শেষ কথা ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্ট। সেই অনুব্রত মণ্ডল কি এখন তৃণমূলে অস্তমিত সূর্য? প্রশ্ন অনেক। শেষ ২৪ ঘন্টার ঘটনাপ্রবাহ সেদিকের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত।
সম্প্রতি বোলপুরের আইসিকে অশ্রাব্য ভাষায় ফোনে কথা বলার একটি অডিও ভাইরাল হয়েছে (যার সত্যতা সারা বাংলা যাচাই করেনি)। সেখানে এক প্রান্তে শোনা গিয়েছে বীরভূমের তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের গলা। এই অডিও ভাইরাল হতেই তোলপাড় হয় বাংলা। শুক্রবার দুপুরে তৃণমূল অনুব্রত মণ্ডল কে নির্দেশ দেয় নিঃশর্তে ক্ষমা চাওয়ার। অন্যদিকে বীরভূম পুলিশের তরফে মামলাও রুজু করা হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, অনুব্রত মণ্ডলের এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম নয়। তাঁরা মনে করাচ্ছেন, ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগের কথা। তখন প্রকাশ্য জনসভায় দাঁড়িয়ে অনুব্রত মণ্ডলকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘ পুলিশকে বোমা মারুন’। তবে সেই ঘটনায় অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা পুলিশ গ্রহণ করেনি। সময়ের চাকা বদলাতে শুরু করে ইডির হাতে অনুব্রত মন্ডলের গ্রেফতারির পরে। প্রায় দু বছর কারাবাস করে নিজের বাড়িতে ফিরেছিলেন অনুব্রত। যদিও কোনওদিন দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে দেখা যায়নি অনুব্রত মণ্ডলকে। এমনকি দলও তাঁকে জেলা সভাপতির পদ থেকে সরায়নি। জেলে থাকাকালীন বীরভূমের তৃণমূলে জেলা সভাপতি হিসেবেই অনুব্রত মণ্ডলের নাম ছিল। তবে সম্প্রতি জেলা সভাপতি পদ তুলে দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের তরফে। তখন থেকেই অনেকের ধারণা, ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে অনুব্রত মন্ডলের। অডিও ভাইরাল ঘটনা তারই প্রমাণ মিলল বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত।
অডিও ভাইরাল হওয়ার পরে দলের তরফে নিঃশর্তে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অনুব্রত মণ্ডলকে। ইতিমধ্যে দল ও পুলিশকে ক্ষমা চেয়ে চিঠিও পাঠিয়েছেন অনুব্রত। তবে সেখানেও চক্রান্তের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। পাশাপাশি ভিডিও বার্তাও দিয়েছেন এই বিষয়ে। এখন প্রশ্ন, বীরভূম তৃণমূলে অনুব্রত জামানা কি শেষের মুখে? বীরভূমের তৃণমূল কর্মীদের একাংশের দাবি, কেষ্টদা দল ছাড়া কিছু বোঝেন না। কিন্তু তিনি জেলা সভাপতি সরে যাওয়ার পর থেকে তার ক্ষমতা কিছুটা কমতে থাকে। তবে জনসমর্থন এখনও রয়েছে অনুব্রতর। কয়েকদিন আগেই অনুব্রতের নেতৃত্বে মিছিলে বহু তৃণমূল কর্মী যোগ দিয়েছিলেন। সেখান থেকে বোঝাই যাচ্ছে, তার জনসমর্থন কোন অংশে কম নেই। তবে এই অডিও ভাইরাল ঘটনার পর থেকে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন একদা বীরভূমের বাঘ অনুব্রত। দলের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনের তরফেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। এদিনই পুলিশ সুপার ‘এক স্থানীয় নেতা’ বলে উল্লেখ করেছেন অনুব্রতকে। রাজনৈতিক কারবারীদের একাংশের মতে, এই ধরনের কথা অনুব্রতের রাজনৈতিক কেরিয়ারের পতন নয় তো!