আদিবাসী চা বাগান শ্রমিকদের কোটি কোটি টাকা লুট! অভিযোগের তীর পশ্চিমবঙ্গের অনগ্রসর শ্রেনী কল্যাণ মন্ত্রীর দূরের আত্মীয়ের বিরুদ্ধেই, ক্ষোভে ফুঁসছে ডুয়ার্সে।
সারা বাংলা ডট ইন ডেস্ক: অতীতে কমবেশি সমগ্র রাজ্যবাসী চিট ফান্ডের কবলে পরে লুট হবার পর এবার আদিবাসী মহিলা চা শ্রমিকদের প্রায় দু কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ রাজ্যেরই অনগ্রসর শ্রেনী কল্যাণ মন্ত্রীর দুর সম্পর্কের আত্মীয়র বিরুদ্ধে। ক্ষোভে ফুঁসছে ডুয়ার্সের আদিবাসী সমাজ ।
মালবাজার মহকুমার একাধিক চা বাগানের মহিলা শ্রমিকদের নিয়ে তৈরি কর হয় গোষ্ঠী। সেই গোষ্ঠীর নাম করে বিভিন্ন মাইক্রো ফাইনান্স কোম্পানি থেকে ঋণ তুলে প্রতারণা করার অভিযোগ দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। নাগেশ্বরী চা বাগানের বাসিন্দা জয় চিক বড়াইক এবং নেওড়া চা বাগানের বাসিন্দা প্রেম চাঁদ মাহালির বিরুদ্ধে।
মালবাজার মহকুমার মেটেলি ব্লকের আইভিল, নাগেশ্বরী, চুলসা সহ বিভিন্ন চা বাগানের শতাধিক মহিলাকে নিয়ে ২০০ থেকে ২৫০টি গোষ্ঠী তৈরি করে প্রায় দু কোটি লুট করেছে বলেই অভিযোগ। প্রতারিত মহিলারা এই সমস্যার সমাধানের জন্য শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক নেতা জোসেফ মুন্ডা এবং মেটালির ব্লক সভাপতি স্নমিতা কালান্দির দ্বারস্থ হয়। চলতি মাসে চা বাগানের কয়েকশো মহিলা শ্রমিককে সাথে নিয়ে মালবাজার শহরের বিভিন্ন মাইক্রো ফাইন্যান্স কোম্পানির অফিসে গিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন শ্রমিক নেতা জোসেফ মুন্ডা। অপরদিকে পশ্চিমবঙ্গ চা মজদুর সমিতির পক্ষ থেকে মালবাজার মহকুমা শাসকের দফতরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এই ঘটনা প্রসঙ্গে শ্রমিক নেতা কৃষ্টান খেরীয়া বলেন, “আপনারা শুনলে অবাক হয়ে যাবেন, এই আদিবাসী অধ্যুষিত ডুয়ার্সের বিভিন্ন চা বাগানে মাইক্রো ফাইন্যান্স কোম্পানির নামে কয়েক কোটি টাকার ঘোটালা হয়েছে। যার মূল শিকার হয়েছেন চা বাগানের আদিবাসী মহিলা শ্রমিকেরা।
প্রতারিত মহিলাদের অভিযোগ, রিজার্ভ ব্যাংকের নিয়মকে অমান্য করেই একের পর এক এক ঋণ দিয়েই চলছে বিভিন্ন মাইক্রো ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো। ঋণ পরিশোধ করবার জন্য দিনে রাতে তাদের বাড়িতে হানা দিচ্ছেন মাইক্রো ফাইন্যান্স কোম্পানির এজেন্ট। অবিলম্বে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নাগেশ্বরী চা বাগানের এক মহিলা শ্রমিক জানান, জয় চিক বাড়াইক জয়লক্ষ্মী অ্যাগ্রো ফার্ম নামে একটি সংস্থা তৈরি করে চা বাগানের কয়েকশো মহিলাকে উপার্জনের পথ দেখানোর নাম করে প্রতারণা করেন। এজন্য বিভিন্ন মাইক্রোফিন্যান্স কোম্পানি থেকে প্রতারকরা কয়েক কোটি টাকা ঋণ নেয়।
শ্রমিক নেতা জোসেফ মুন্ডা বলেন চারজন করে গোষ্ঠী তৈরি করে, এক এক জনের নামে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লোন তোলা হয়েছে বিভিন্ন মাইক্রো ফাইন্যান্স কোম্পানির থেকে । সাধারণ গরিব মূলত আদিবাসী চা বাগানের শ্রমিকেরা এই প্রতারনার শিকার হয়েছেন। কখনোই পারবে না এই বিরাট অংকের লোনের কিস্তি পরিশোধ করতে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে প্রতারণা করার অভিযোগে মেটেলি থানার পুলিশ নেওড়া চা বাগানের প্রেমচাঁদ মাহালি এবং ইয়ংটং চা বাগানের বাসিন্দা সঞ্জয় মাহালিকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মন্ত্রীর দূর সম্পর্কের আত্মীয় নাগেশ্বরী চা বাগানের বাসিন্দা জয় চিক বড়াইক এখনও অধরা।
এই বিষয়ে মন্ত্রী পুত্র তথা রাঙ্গামাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রোহিত চিক বড়াইককে ফোন যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, অভিযুক্ত জয় চিক বড়াইকের সাথে তাঁদের কোনও পারিবারিক সম্পর্ক নেই। এবিষয়ে মেটেলি অঞ্চলের বিজেপি মহিলা মোর্চার নেত্রী তথা পঞ্চায়েত সদস্যা আনি চিক বড়াইক জানান, বিষয়টি খুবই গম্ভীর। চা বাগানে কাজ করা সরল সাদাসিধে আদিবাসী মহিলাদের অধিক লাভের প্রলোভন দেখিয়ে একটি সংস্থা খুলে এই কাজ করা হয়েছে দীর্ঘ সময় ধরে। তাঁর দাবি, এটাও কানে আসছে, রাজ্যের আদিবাসী উন্নয়ন মন্ত্রী বুল চিক বড়াইকের দুর সম্পর্কের আত্মীয় এই জয় চিক বরাইক। আমরা ইতিমধ্যেই প্রতারিত আদিবাসী মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেছি। পরবর্তীতে এমন ভয়ানক আর্থিক প্রতারণার বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছে।