দামোদরে তলিয়ে মৃত্যু তিন তরুণের। শোকোস্তব্ধ কাঁকসার দু’নম্বর কলোনি।
সারা বাংলা ডেস্ক: নদের পাড়ে আট বন্ধু গিয়েছিল নিজেদের মতো সময় কাটাতে। কিন্তু সেই নদই কেড়ে নিল তিন তরুণের তাজা প্রাণ। বুদবুদের রণডিহা এলাকায় দামোদর নদে স্নান করতে নেমে মারা গেল কাঁকসা ২ নম্বর কলোনির তিন তরুণ সুরজিৎ বিশ্বাস, অভিজিৎ গায়েন ও জিতু অধিকারী। প্রত্যেকের বয়স ১৮ বছরের মধ্যে। এলাকার তিন তরতাজা তরুণকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ কাঁকসার দু’নম্বর কলোনি এলাকা। বৃহস্পতিবার জিতু ও অভিজিতের দেহ এলাকায় পৌঁছাতেই শোকে পাথর বাসিন্দারা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁকসার দু’নম্বর কলোনির ৮ তরুণ মিলে বুধবার দুপুরে রণডিহা এলাকায় যায়। দামোদরের স্নান করতে নেমে জিতু, অভিজিৎ ও সুরজিৎ জলে তলিয়ে যান। স্থানীয় জেলেরা উদ্ধার কাজ শুরু করেন। বাঁকুড়া জেলা থেকে চলে আসে উদ্ধারকারী দল। স্পিডবোট ও ডুবুরি নামিয়ে দামোদরের তল্লাশি চলতে থাকে নিখোঁজ যুবকদের। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ জিতু অধিকারীর দেহ উদ্ধার হয়। রাতের দিকে উদ্ধার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার সূর্যের আলো ফুটতেই ফের উদ্ধার কাজ শুরু হয়। এদিন সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ ওই একই জায়গা থেকে অভিজিতের দেহ উদ্ধার হয়। দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ উদ্ধার হয় সুরজিতের দেহ। বুদবুদ থানার পুলিশ তিনটি দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য দুর্গাপুর হাসপাতালে পাঠায়। দু’নম্বর কলোনি এলাকার বহু মানুষ এদিন রণডিহা এলাকায় ছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দারা ভিড় জমিয়েছিলেন। একই এলাকার তিন তরুণের এমন পরিণতিতে হতবাক এলাকার বাসিন্দারা। তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না, কেন ওই তরুণেরা জলে নামতে গেলেন। এক বাসিন্দা বলেন, ছোট থেকে বাবা মা অনেক কষ্ট করে ছেলেদের বড় করে। তারপর এরকম করে কোন দুর্ঘটনায় ছেলের চলে যাওয়া মেনে নেওয়া যায় না।
যে এলাকার ওই তরুণদের বাড়ি সে এলাকায় এদিন গিয়ে দেখা গেল, ওই তিনজনের বাড়ির সামনে প্রতিবেশীদের ভিড়। সবার চোখে জল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই ৮ যুবকের সকলের বাড়ি পাশাপাশি। যে তিনজন মারা গিয়েছেন তারা এলাকায় ভালো ছেলে হিসাবেই পরিচিত ছিল। অভিজিৎ গায়েন মান করে একটি বেসরকারি আইটিআই কলেজে পড়াশোনা করত। প্রতিবেশীরা জানান, তার বাবা রাঁধুনির কাজ করেন। খুব কষ্ট করে ছেলেকে পড়াশোনা করাচ্ছিলেন। অভিজিতের মা শিল্পী গায়েন বলেন, ছেলে গোপালপুর যাচ্ছি বলে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। রণডিহা যাবে জানতে পারলে তাকে যেতে দিতাম না। আমার একমাত্র ছেলেকে হারালাম। আরেক তরুণ জিতু কলেজছাত্র। অন্যদিকে সুরজিৎ এক আলু ব্যবসায়ীর কাছে কাজ করেন। এক প্রতিবেশী প্রতিমা মজুমদার বলেন, পাড়াতে সবার সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার ছিল ছেলেগুলোর। কেন যে তারা জলে নামতে গেল বুঝে উঠতে পারছি না। আমরা শোকস্তব্ধ।